প্রিন্ট এর তারিখ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ||
প্রকাশের তারিখ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫
চলনবিলে শুঁটকি মৌসুমে খালি চাতাল, হতাশ জেলেরাা
মো. খালিদ হাসান,, তাড়াশ: ||
দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি শিল্প এ বছর মারাত্মক সংকটে পড়েছে চলনবিলে। দেশি মাছের ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত শুঁটকি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।চলনবিলের মহিষলুটি, চাটমোহর, গুরুদাসপুর, সিংড়া, হালতী ও লাহিরী মোহনপুরসহ বিভিন্ন শুঁটকি পল্লিতে কাঁচা মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী সীমিত আকারে শুঁটকি উৎপাদন শুরু করলেও অধিকাংশ চাতাল এখনও বন্ধ রয়েছে। যারা উৎপাদন শুরু করেছেন, তারাও কাঁচা মাছের উচ্চমূল্য ও স্বল্প সরবরাহের কারণে লোকসানে পড়ছেন।প্রতিবছর ভাদ্র মাস থেকেই চলনবিলে শুঁটকি মৌসুম শুরু হয়। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মাছের জোগান বাড়ে। কিন্তু এ বছর আশ্বিন মাসের আগেই বিল শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানির স্তর নেমে গেলেও জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে না, ফলে শুঁটকি উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।তাড়াশের মহিষলুটি এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, অন্যান্য বছর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে শুঁটকি মৌসুমে শত শত নারী-পুরুষ মাছ ধোয়া, শুকানো ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে যাতায়াতের সময় শুঁটকির গন্ধ নাকে লাগত। কিন্তু এবার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন— মৌসুম শুরু হলেও চাতালগুলো খালি, শ্রমিকদের হাতে কাজ নেই।তথ্য অনুযায়ী, একসময় চলনবিলের ৪৮টি বিল, ১৪টি খাল ও ১১টি নদীতে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। মৌসুম শেষে উদ্বৃত্ত মাছ দিয়েই তৈরি হতো শুঁটকি, যা দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত মাছ আহরণ ও পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে এখন অনেক প্রজাতির দেশি মাছ বিলুপ্তির পথে।মহিষলুটির ব্যবসায়ী আলতাব হোসেন জানান, “প্রতিবছর ভাদ্র মাসেই ব্যবসা জমজমাট থাকে। কিন্তু এ বছর বিলের পানি কমলেও মাছ নেই। মাছ কম থাকায় দামও বেড়ে যাচ্ছে।”দেবীপুর গ্রামের আজমল হোসেন বলেন, “বর্তমানে সীমিত পরিমাণে পুটি ও চাঁদা মাছ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়। চার মণ কাঁচা মাছ শুকিয়ে এক মণ শুঁটকি হয়, যা সৈয়দপুর মোকামে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবু মাছের অভাব ও বেশি দামের কারণে আমরা লোকসান গুনছি।”মান্নান নগরের ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বলেন, “বিলে মাছ নেই। চায়না ও নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মা মাছ ধরা পড়ে যাওয়ায় পোনা উৎপাদন কমে গেছে। ফলে মাছের সংকট ভয়াবহ।”তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোকাররম হোসেন জানান, “দুয়ারী বা চায়না জালে মা মাছ ধরা পড়ার কারণে প্রজনন কমেছে। দেশি মাছ বাড়াতে পোনা অবমুক্তকরণ, অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।”স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে দেশের অন্যতম মিঠাপানির শুঁটকি শিল্প বিলুপ্তির পথে চলে যেতে পারে। তারা সরকারের কাছে অবৈধ জাল বন্ধ, পোনা মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণ ও খোলা জলাশয়ে পোনা অবমুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
কপিরাইট © ২০২৫ খোলা বার্তা । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত