আজকের পৃথিবী প্রযুক্তির গতিতে ছুটছে। হাতে হাতে মোবাইল, চোখের সামনে ইন্টারনেট—তথ্য এখন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। এই তথ্যপ্রবাহ আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নিয়েছে মানুষের ভেতরের সবচেয়ে মূল্যবান গুণ—মানবিকতা।
দুর্ঘটনা ঘটলেই এখনকার দৃশ্য প্রায় একই রকম—মানুষ ছুটে আসে না আহতকে সাহায্য করতে, বরং মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে যায় ভিডিও করার জন্য। কেউ খুঁজে বেড়ায় লাইভ অপশন, কেউ আবার কীভাবে দ্রুত “কনটেন্ট বানানো যায়” সেটাই ভেবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ যেন জীবন-মৃত্যুর লড়াই নয়, বরং ফেসবুক বা ইউটিউবের ভিউ-বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা!
সমাজের বিবেক কোথায় হারাল?
একসময় মানুষ বিপদে পড়লেই আশপাশের লোকজন ছুটে যেত সাহায্য করতে। রক্ত দিতে, হাসপাতালে নিতে, কিংবা অন্তত পুলিশে খবর দিতে এগিয়ে আসত। এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে তামাশা দেখার মানসিকতা। আহত মানুষটি যন্ত্রণায় ছটফট করছে, আর আশপাশের মানুষ দাঁড়িয়ে আছে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার মতো করে।
এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সংবাদ সংগ্রাহক বা সাংবাদিকরাও তাৎক্ষণিক মানবিক সেবা না দিয়ে খবর পাঠানোর জন্য প্রথমে ছবি বা ভিডিও পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যদিও পরবর্তীতে এই দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে মানুষ হতবাক হয়, কিন্তু তখন আর আহতকে ফেরানো যায় না।
ভাইরালের নেশা ও টাকা ইনকামের প্রলোভন:
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার নেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি বিপজ্জনক দিক—টাকা ইনকামের লোভ। ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটক এখন শুধু বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম নয়, অনেকের কাছে এটি হয়ে উঠেছে “রোজগারের জায়গা”।
ফেসবুক এখন ভিডিও মনিটাইজেশনের মাধ্যমে কনটেন্ট নির্মাতাদের টাকা দেয়। যার মানে—যত বেশি ভিউ, লাইক বা শেয়ার, তত বেশি অর্থ আয়। ফলাফল হিসেবে, অনেকেই মানবিক দায়িত্ব ভুলে গিয়ে যেকোনো ঘটনা, বিশেষ করে দুর্ঘটনা বা দুঃখজনক মুহূর্তকে “কনটেন্ট” বানিয়ে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
দুর্ঘটনার স্থলে কেউ রক্তে ভেজা মানুষকে সাহায্য না করে দাঁড়িয়ে থাকে ক্যামেরা হাতে, কারণ তার মনে হয়—এই ভিডিও ভাইরাল হলে ফলোয়ার বাড়বে, পেজ মনিটাইজ হবে, আর তাতে টাকা আসবে। এই অমানবিক বাস্তবতা এখন যেন নতুন প্রজন্মের “নেশা” হয়ে উঠেছে।
অশিক্ষিত’র হাতে সংবাদ তৈরির বিপদ:
ফেসবুক ও ইউটিউবের সহজ সুযোগের কারণে এখন অশিক্ষিত ও অদক্ষ মানুষও নিজেকে “সংবাদকর্মী” বা “কনটেন্ট নির্মাতা” হিসেবে দাবি করছে। তারা যাচাই-বাছাই ছাড়া যেকোনো খবর, ভিডিও বা তথ্য প্রচার করছে, যা অনেক সময় বিভ্রান্তি ও গুজবের জন্ম দিচ্ছে।
যেখানে প্রকৃত সাংবাদিকরা তথ্য যাচাই, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করেন, সেখানে এসব অনভিজ্ঞ কনটেন্ট নির্মাতারা শুধুমাত্র ভাইরাল বা ইনকামের আশায় মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত খবর প্রচার করেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে, আর মূলধারার সংবাদপত্র ও পেশাদার সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
আজকাল দেখা যায়—ফেসবুকে যেকোনো ব্যক্তি ব্রেকিং নিউজ লিখে পোস্ট দিচ্ছে, অথচ সেটি আসলে ভিত্তিহীন বা সম্পূর্ণ বিকৃত তথ্য। মানুষ এইসব তথ্যকে সত্য ভেবে শেয়ার করছে, মন্তব্য করছে, আর অজান্তেই সমাজে এক ধরনের ‘ডিজিটাল বিশৃঙ্খলা’ ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি শুধু সাংবাদিকতার মর্যাদাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং সত্য ও মানবিকতার ধারণাকেও বিকৃত করে দিচ্ছে।
ভাইরালের নেশা: নতুন প্রজন্মের বড় আসক্তি
আজকের তরুণ সমাজ বিশেষভাবে আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাল সংস্কৃতিতে। টিকটক, ফেসবুক রিল, ইউটিউব শর্টস—এসবের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডে জনপ্রিয় হয়ে ওঠাই যেন সবচেয়ে বড় সাফল্য। অথচ কেউ ভাবে না—এই জনপ্রিয়তা সাময়িক, কিন্তু যাকে সাহায্য করা যেত সেই মানুষটির জীবন হয়তো চিরতরে নিভে গেল।
গবেষণায় দেখা গেছে—মানুষ এখন প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ব্যয় করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যার বড় অংশই যাচ্ছে বিনোদন ও কনটেন্ট ভোগে। এই অভ্যাস ক্রমে তাদের মানবিক সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। কারণ যেকোনো দৃশ্য তারা শুধু ভিউ সংখ্যা বা ইনকাম ভ্যালু দিয়ে মূল্যায়ন করছে, বাস্তব মানবিকতা দিয়ে নয়।
ভবিষ্যৎ ঝুঁকি:
এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমাজে এক ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে—
১ মানবিক শূন্যতা: বিপদে মানুষ আর মানুষকে সাহায্য করবে না।
২ আইনগত জটিলতা: আহতকে বাঁচানোর পরিবর্তে ভিডিও করার কারণে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রমাণ হিসেবে সেই ভিডিও ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথচ ভুক্তভোগী বেঁচে থাকলে হয়তো সত্য প্রমাণ সহজ হতো।
৩ মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: যারা সাহায্যের পরিবর্তে ভিডিও করে, তাদের ভেতর একধরনের অপরাধবোধ জন্ম নেয়, যা মানসিকভাবে সমাজকে আরও অসুস্থ করে তোলে।
৪ অর্থলোভী কনটেন্ট কালচার: মানুষ যত বেশি ভাইরাল হবে, তত বেশি আয় করবে—এই ধারণা থেকে জন্ম নিচ্ছে বিকৃত মানসিকতা ও সহানুভূতিহীন প্রজন্ম।
৫ অদক্ষ সংবাদ সংস্কৃতি: যাচাইবিহীন কনটেন্ট প্রচারের কারণে মূলধারার সংবাদ ও সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে।
আমাদের করণীয়:
আমরা যদি এই ভাইরাল নেশা থেকে বের হতে চাই, তবে কিছু সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে—
মানবিক শিক্ষা বাড়ানো: পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে—মানুষকে সাহায্য করাই প্রথম দায়িত্ব।
সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা: গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে “ভাইরাল নয়, আগে মানুষ” এই স্লোগান নিয়ে।
আইন প্রণয়ন: কোনো দুর্ঘটনায় আহতকে সাহায্য না করে ভিডিও করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। কিছু দেশে এ ধরনের আইন ইতিমধ্যেই চালু আছে।
ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞা: প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ-এর জন্য নয়, আগে একজন মানুষকে বাঁচানোই হবে আমার কাজ।
ইন্টারনেট আমাদের দিয়েছে গতি, দিয়েছে জ্ঞান, দিয়েছে বিনোদন। কিন্তু যদি এর জন্য আমাদের মানবিকতাই হারিয়ে যায়, তবে এই অর্জন অর্থহীন। আমরা যদি এখনই না বদলাই, তাহলে হয়তো একদিন নিজেরাও বিপদে পড়ব আর দেখব—আশেপাশের মানুষ মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না।
তাই প্রশ্ন একটাই—আমরা কি মানুষ হয়ে থাকতে চাই, নাকি ভাইরালের দাস হয়ে বাঁচতে চাই?
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫
আজকের পৃথিবী প্রযুক্তির গতিতে ছুটছে। হাতে হাতে মোবাইল, চোখের সামনে ইন্টারনেট—তথ্য এখন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। এই তথ্যপ্রবাহ আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কেড়ে নিয়েছে মানুষের ভেতরের সবচেয়ে মূল্যবান গুণ—মানবিকতা।
দুর্ঘটনা ঘটলেই এখনকার দৃশ্য প্রায় একই রকম—মানুষ ছুটে আসে না আহতকে সাহায্য করতে, বরং মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে যায় ভিডিও করার জন্য। কেউ খুঁজে বেড়ায় লাইভ অপশন, কেউ আবার কীভাবে দ্রুত “কনটেন্ট বানানো যায়” সেটাই ভেবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ যেন জীবন-মৃত্যুর লড়াই নয়, বরং ফেসবুক বা ইউটিউবের ভিউ-বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা!
সমাজের বিবেক কোথায় হারাল?
একসময় মানুষ বিপদে পড়লেই আশপাশের লোকজন ছুটে যেত সাহায্য করতে। রক্ত দিতে, হাসপাতালে নিতে, কিংবা অন্তত পুলিশে খবর দিতে এগিয়ে আসত। এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে তামাশা দেখার মানসিকতা। আহত মানুষটি যন্ত্রণায় ছটফট করছে, আর আশপাশের মানুষ দাঁড়িয়ে আছে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার মতো করে।
এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সংবাদ সংগ্রাহক বা সাংবাদিকরাও তাৎক্ষণিক মানবিক সেবা না দিয়ে খবর পাঠানোর জন্য প্রথমে ছবি বা ভিডিও পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যদিও পরবর্তীতে এই দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে মানুষ হতবাক হয়, কিন্তু তখন আর আহতকে ফেরানো যায় না।
ভাইরালের নেশা ও টাকা ইনকামের প্রলোভন:
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার নেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি বিপজ্জনক দিক—টাকা ইনকামের লোভ। ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটক এখন শুধু বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম নয়, অনেকের কাছে এটি হয়ে উঠেছে “রোজগারের জায়গা”।
ফেসবুক এখন ভিডিও মনিটাইজেশনের মাধ্যমে কনটেন্ট নির্মাতাদের টাকা দেয়। যার মানে—যত বেশি ভিউ, লাইক বা শেয়ার, তত বেশি অর্থ আয়। ফলাফল হিসেবে, অনেকেই মানবিক দায়িত্ব ভুলে গিয়ে যেকোনো ঘটনা, বিশেষ করে দুর্ঘটনা বা দুঃখজনক মুহূর্তকে “কনটেন্ট” বানিয়ে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
দুর্ঘটনার স্থলে কেউ রক্তে ভেজা মানুষকে সাহায্য না করে দাঁড়িয়ে থাকে ক্যামেরা হাতে, কারণ তার মনে হয়—এই ভিডিও ভাইরাল হলে ফলোয়ার বাড়বে, পেজ মনিটাইজ হবে, আর তাতে টাকা আসবে। এই অমানবিক বাস্তবতা এখন যেন নতুন প্রজন্মের “নেশা” হয়ে উঠেছে।
অশিক্ষিত’র হাতে সংবাদ তৈরির বিপদ:
ফেসবুক ও ইউটিউবের সহজ সুযোগের কারণে এখন অশিক্ষিত ও অদক্ষ মানুষও নিজেকে “সংবাদকর্মী” বা “কনটেন্ট নির্মাতা” হিসেবে দাবি করছে। তারা যাচাই-বাছাই ছাড়া যেকোনো খবর, ভিডিও বা তথ্য প্রচার করছে, যা অনেক সময় বিভ্রান্তি ও গুজবের জন্ম দিচ্ছে।
যেখানে প্রকৃত সাংবাদিকরা তথ্য যাচাই, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করেন, সেখানে এসব অনভিজ্ঞ কনটেন্ট নির্মাতারা শুধুমাত্র ভাইরাল বা ইনকামের আশায় মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত খবর প্রচার করেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে, আর মূলধারার সংবাদপত্র ও পেশাদার সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
আজকাল দেখা যায়—ফেসবুকে যেকোনো ব্যক্তি ব্রেকিং নিউজ লিখে পোস্ট দিচ্ছে, অথচ সেটি আসলে ভিত্তিহীন বা সম্পূর্ণ বিকৃত তথ্য। মানুষ এইসব তথ্যকে সত্য ভেবে শেয়ার করছে, মন্তব্য করছে, আর অজান্তেই সমাজে এক ধরনের ‘ডিজিটাল বিশৃঙ্খলা’ ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি শুধু সাংবাদিকতার মর্যাদাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং সত্য ও মানবিকতার ধারণাকেও বিকৃত করে দিচ্ছে।
ভাইরালের নেশা: নতুন প্রজন্মের বড় আসক্তি
আজকের তরুণ সমাজ বিশেষভাবে আক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাল সংস্কৃতিতে। টিকটক, ফেসবুক রিল, ইউটিউব শর্টস—এসবের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডে জনপ্রিয় হয়ে ওঠাই যেন সবচেয়ে বড় সাফল্য। অথচ কেউ ভাবে না—এই জনপ্রিয়তা সাময়িক, কিন্তু যাকে সাহায্য করা যেত সেই মানুষটির জীবন হয়তো চিরতরে নিভে গেল।
গবেষণায় দেখা গেছে—মানুষ এখন প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ব্যয় করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যার বড় অংশই যাচ্ছে বিনোদন ও কনটেন্ট ভোগে। এই অভ্যাস ক্রমে তাদের মানবিক সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। কারণ যেকোনো দৃশ্য তারা শুধু ভিউ সংখ্যা বা ইনকাম ভ্যালু দিয়ে মূল্যায়ন করছে, বাস্তব মানবিকতা দিয়ে নয়।
ভবিষ্যৎ ঝুঁকি:
এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সমাজে এক ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে—
১ মানবিক শূন্যতা: বিপদে মানুষ আর মানুষকে সাহায্য করবে না।
২ আইনগত জটিলতা: আহতকে বাঁচানোর পরিবর্তে ভিডিও করার কারণে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রমাণ হিসেবে সেই ভিডিও ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথচ ভুক্তভোগী বেঁচে থাকলে হয়তো সত্য প্রমাণ সহজ হতো।
৩ মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: যারা সাহায্যের পরিবর্তে ভিডিও করে, তাদের ভেতর একধরনের অপরাধবোধ জন্ম নেয়, যা মানসিকভাবে সমাজকে আরও অসুস্থ করে তোলে।
৪ অর্থলোভী কনটেন্ট কালচার: মানুষ যত বেশি ভাইরাল হবে, তত বেশি আয় করবে—এই ধারণা থেকে জন্ম নিচ্ছে বিকৃত মানসিকতা ও সহানুভূতিহীন প্রজন্ম।
৫ অদক্ষ সংবাদ সংস্কৃতি: যাচাইবিহীন কনটেন্ট প্রচারের কারণে মূলধারার সংবাদ ও সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে।
আমাদের করণীয়:
আমরা যদি এই ভাইরাল নেশা থেকে বের হতে চাই, তবে কিছু সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে—
মানবিক শিক্ষা বাড়ানো: পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে—মানুষকে সাহায্য করাই প্রথম দায়িত্ব।
সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা: গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে “ভাইরাল নয়, আগে মানুষ” এই স্লোগান নিয়ে।
আইন প্রণয়ন: কোনো দুর্ঘটনায় আহতকে সাহায্য না করে ভিডিও করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। কিছু দেশে এ ধরনের আইন ইতিমধ্যেই চালু আছে।
ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞা: প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ-এর জন্য নয়, আগে একজন মানুষকে বাঁচানোই হবে আমার কাজ।
ইন্টারনেট আমাদের দিয়েছে গতি, দিয়েছে জ্ঞান, দিয়েছে বিনোদন। কিন্তু যদি এর জন্য আমাদের মানবিকতাই হারিয়ে যায়, তবে এই অর্জন অর্থহীন। আমরা যদি এখনই না বদলাই, তাহলে হয়তো একদিন নিজেরাও বিপদে পড়ব আর দেখব—আশেপাশের মানুষ মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না।
তাই প্রশ্ন একটাই—আমরা কি মানুষ হয়ে থাকতে চাই, নাকি ভাইরালের দাস হয়ে বাঁচতে চাই?
আপনার মতামত লিখুন